স্মার্টফোন এখন আমাদের প্রতিদিনের সঙ্গী। এটি শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়; একাধিক ফিচার এবং শক্তিশালী প্রসেসরের ফলে এটি বিভিন্ন ব্যক্তিগত এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাজেও ব্যবহৃত হয়। বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের অসংখ্য স্মার্টফোনের ভিড়ে আপনার জন্য সঠিক ফোনটি খুঁজে বের করা কঠিন হতে পারে। তাই, মোবাইল কেনার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খেয়াল রাখা দরকার।
একটি স্মার্টফোনের পারফরম্যান্স প্রসেসর এবং র্যামের ওপর নির্ভর করে। প্রসেসর কম্পিউটেশনাল কাজ সম্পন্ন করে, আর র্যাম তথ্য প্রস্তুত রাখে। তাই ভালো পারফরম্যান্সের জন্য শক্তিশালী প্রসেসর এবং পর্যাপ্ত র্যাম দরকার। প্রসেসরগুলোর মধ্যে কোয়ালকমের স্ন্যাপড্রাগন, স্যামসাংয়ের এক্সিনস, এবং অ্যাপলের এ১৫ বায়োনিক জনপ্রিয়। মিডিয়াটেকের হেলিও সাধারণত কম দামের ফোনে ব্যবহৃত হয়। ক্লক স্পিড এবং কোরের সংখ্যা বেশি হলে পারফরম্যান্সও ভালো হয়। উচ্চ-পারফরম্যান্সের জন্য ২.০ GHz সিপিইউ বাঞ্ছনীয়। র্যামের ক্ষেত্রে, সাধারণ ব্যবহারের জন্য ৩ জিবি যথেষ্ট, তবে গেমিং বা ভারী কাজের জন্য ৬ থেকে ৮ জিবি উপযুক্ত। ১২ জিবির র্যাম সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য অতিরিক্ত হতে পারে।
আপনার স্মার্টফোনের ডিসপ্লে আকার ও রেজুলেশন আপনার ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে নির্ধারণ করা উচিত। যারা ভিডিও দেখা, ছবি বা ভিডিও সম্পাদনা বা মুভি দেখতে পছন্দ করেন, তাদের জন্য সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় ইঞ্চি ডিসপ্লে এবং ফুল এইচডি বা কিউএইচডি রেজুলেশন উপযোগী হতে পারে। বড় ডিসপ্লের সুবিধা থাকলেও অতিরিক্ত বড় স্ক্রিনের ফোনগুলো বহন করতে কিছুটা কষ্ট হতে পারে।
যদি আপনি সাধারণ ব্রাউজিং, চ্যাটিং বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে সীমাবদ্ধ থাকেন, তবে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ ইঞ্চির এইচডি বা ফুল এইচডি ডিসপ্লের ফোন আপনার জন্য যথেষ্ট হবে।
প্রসেসর
ফোনের পারফরম্যান্সের মূল চালিকা শক্তি এর প্রসেসর। একটি ভালো প্রসেসর ফোনকে দ্রুত কার্যক্ষম রাখে, হ্যাং থেকে মুক্ত রাখে এবং ব্যাটারির স্থায়িত্ব বাড়ায়। যদি আপনি ফোনে ভারি গেমিং, ভিডিও সম্পাদনা, ডকুমেন্ট সম্পাদনা বা একসঙ্গে একাধিক অ্যাপ ব্যবহার করেন, তাহলে উচ্চ ক্ষমতার প্রসেসর নির্বাচন করা জরুরি। অন্যদিকে, সাধারণ ব্যবহারের জন্য অতিরিক্ত শক্তিশালী প্রসেসর প্রয়োজন নেই।
ক্যামেরা নির্বাচন করতে গেলে শুধুমাত্র মেগাপিক্সেলের ওপর নির্ভর না করে, অ্যাপারচার, আইএসও, পিক্সেল সাইজ এবং অটোফোকাসের বিষয়েও নজর দেয়া জরুরি। উদাহরণস্বরূপ, প্রিমিয়াম ব্র্যান্ড আইফোনের ১২ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা দিয়ে তোলা ছবি অনেক মানসম্মত হয়, যেখানে অন্যান্য ফোনে আরও বেশি মেগাপিক্সেল থাকা সত্ত্বেও একই মান পাওয়া যায় না। ক্যামেরার সেন্সরের আকার, ইমেজ সিগন্যাল প্রসেসর এবং অপটিক্যাল ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ব্যাটারি আপনার ফোন কতটা সময় সক্রিয় থাকবে, তা নির্ধারণ করে। বড় ডিসপ্লের ফোনগুলো সাধারণত বেশি ব্যাটারি শক্তি ব্যবহার করে, তাই দীর্ঘ সময় ব্যবহারের জন্য বেশি এমএএইচ ক্ষমতার ব্যাটারি প্রয়োজন। পাঁচ হাজার এমএএইচ ক্ষমতার ব্যাটারির ফোন দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি লাইফের জন্য আদর্শ।
অপারেটিং সিস্টেমের সংস্করণ ও ইউজার ইন্টারফেস সহজ ও ব্যবহারবান্ধব হলে ব্যবহারকারী অভিজ্ঞতা আরও ভালো হয়। নিখুঁত অ্যান্ড্রয়েড অভিজ্ঞতা পেতে মটোরোলা, নেক্সাস, পিক্সেল বা অ্যান্ড্রয়েড ওয়ানচালিত ডিভাইস বেছে নিতে পারেন। এছাড়াও স্যামসাং টাচউইজ, ইএমইউআই, জেনইউআই এবং এক্সপেরিয়া ইউআই’র মতো ইউজার ইন্টারফেসগুলো ব্যবহার করা সহজ।
বর্তমানের অধিকাংশ স্মার্টফোনে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর বা আইরিশ স্ক্যানারের মতো নিরাপত্তা ফিচার থাকে, যা শুধুমাত্র ফোন লক-আনলকের জন্যই নয়, বরং নির্দিষ্ট ফাইলেও পাসওয়ার্ড দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হলে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরযুক্ত ফোনগুলো বেছে নেওয়া যেতে পারে।
ভিডিও কনফারেন্স, ভিডিও স্ট্রিমিং বা মিউজিক শোনার জন্য ফোনের অডিও কোয়ালিটি গুরুত্বপূর্ণ। যারা চলতি পথে বিনোদন উপভোগ করতে পছন্দ করেন, তাদের জন্য সামনের দিকে স্পিকারযুক্ত ফোন উপযুক্ত হবে। পেছনের স্পিকারযুক্ত ফোন সাধারণ কাজের জন্য যথেষ্ট হলেও, উচ্চ মানের অডিওর জন্য ফ্রন্ট-ফেসিং স্পিকার ভালো।
ফোন কেনার আগে আপনার বাজেট নির্ধারণ করে নিন। প্রয়োজনীয় ফিচারগুলো মিলিয়ে সেরা ফোনটি বেছে নিন এবং সম্ভব হলে বাজেট কিছুটা বাড়িয়ে হলেও ভালো ফিচারের ফোন কিনুন। বাজেটের ওপর নির্ভর করে লেটেস্ট প্রযুক্তি ও ফিচারগুলো পাওয়া যাবে।
মন্তব্য
এই নিবন্ধটি জন্য কোন মন্তব্য নেই.