বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো চালু হলো গুগলের জনপ্রিয় ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা গুগল পে। প্রাথমিকভাবে এ সেবা কেবল সিটি ব্যাংকের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডধারীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। ফলে এখন থেকে সিটি ব্যাংকের গ্রাহকরা তাদের অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনে গুগল পে ব্যবহার করে দেশ-বিদেশে লেনদেন করতে পারবেন।
সিটি ব্যাংকের পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গ্রাহকরা গুগল পে অ্যাপে তাদের ব্যাংক কার্ড সংযুক্ত করে NFC (Near Field Communication) প্রযুক্তি ব্যবহার করে দ্রুত ও নিরাপদ পেমেন্ট সম্পন্ন করতে পারবেন। এছাড়া অনলাইন শপিং, সাবস্ক্রিপশন চার্জ, ইন-অ্যাপ পারচেজসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুগল পে ব্যবহারযোগ্য।
বিশ্বজুড়ে বহুল ব্যবহৃত গুগল পে মূলত স্মার্টফোনভিত্তিক একটি মোবাইল পেমেন্ট সেবা, যা ব্যবহারকারীদের কার্ডের তথ্য সংরক্ষণ না করে একটি ভার্চুয়াল অ্যাকাউন্ট নম্বরের মাধ্যমে লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। এতদিন বাংলাদেশে এ সেবা আনুষ্ঠানিকভাবে চালু না থাকলেও, সিটি ব্যাংকের এ উদ্যোগের মাধ্যমে দেশের ফিনটেক খাতে এক নতুন দিগন্তের সূচনা হলো।
সেবা ব্যবহার করতে হলে গ্রাহকদেরকে অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনে গুগল পে অ্যাপ ইনস্টল করে ‘Add a Card’ অপশনে গিয়ে তাদের সিটি ব্যাংকের কার্ডের তথ্য যুক্ত করতে হবে। কার্ড ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হলে এনএফসি সুবিধাসম্পন্ন দোকানে ‘Tap and Pay’ ফিচার ব্যবহার করে পেমেন্ট করা যাবে। ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গুগল পে-সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যায় ২৪ ঘণ্টা গ্রাহক সহায়তা সেবা দেওয়া হবে।
তবে এ সেবা আপাতত শুধু অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের জন্যই উন্মুক্ত এবং কেবল সিটি ব্যাংকের গ্রাহকরা এটি ব্যবহার করতে পারবেন। ভবিষ্যতে অন্যান্য ব্যাংকও এই সেবায় যুক্ত হতে পারে বলে আশা করছে সংশ্লিষ্টরা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সেবাটি চালু হওয়া দেশের জন্য ইতিবাচক হলেও ব্যবহারকারীদের জন্য কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেমন—এটি ব্যবহার করতে হলে স্মার্টফোনে এনএফসি প্রযুক্তি থাকা আবশ্যক, যা এখনো বাংলাদেশের অনেক ফোনে অনুপস্থিত বা নিষ্ক্রিয়। তাছাড়া বেশিরভাগ দোকানপাট এখনো এনএফসি-ভিত্তিক পেমেন্ট সিস্টেম গ্রহণে প্রস্তুত নয়। ফলে এই প্রযুক্তির পূর্ণ সুবিধা নিতে হলে দেশের পেমেন্ট অবকাঠামোয় আরও উন্নয়ন প্রয়োজন।
ফিনটেক বিশেষজ্ঞদের মতে, গুগল পে-এর যাত্রা বাংলাদেশের ডিজিটাল লেনদেন খাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এটি দেশকে আন্তর্জাতিক মানের মোবাইল পেমেন্ট ইকোসিস্টেমে যুক্ত করতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। তবে এই প্রযুক্তি সম্পর্কে সচেতনতা ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হলে এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা কঠিন হতে পারে।
এদিকে সিটি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা গুগল পে সেবাটি আরও সহজলভ্য করতে ভবিষ্যতে আরও উন্নয়ন ও সমন্বয়ের কাজ করছে। অন্যান্য ব্যাংক গুগল পে সেবায় অংশ নিলে এটি আরও বিস্তৃত পরিসরে ব্যবহার সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মন্তব্য
এই নিবন্ধটি জন্য কোন মন্তব্য নেই.