সার্চ ইঞ্জিনের একচেটিয়া আধিপত্য এখন আর আগের মতো নেই। বিশ্বজুড়ে ব্যবহারকারীরা এখন তথ্য অনুসন্ধান থেকে শুরু করে কেনাকাটার সিদ্ধান্ত পর্যন্ত নির্ভর করছেন চ্যাটজিপিটি, গুগল জেমিনি বা ক্লদের মতো জেনারেটিভ এআই টুলের ওপর। এসব কনভারসেশনাল চ্যাটবটের মাধ্যমে যুক্ত লিংক থেকেই বাড়ছে ওয়েবসাইটের ট্রাফিক, ফলে দিন দিন গুরুত্ব হারাচ্ছে প্রচলিত এসইও (সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন) টুলগুলো।
এক গবেষণা অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের মে পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে রিটেইল সাইটে জেনারেটিভ এআই থেকে আসা ট্রাফিক বেড়েছে প্রায় ৩,৫০০ শতাংশ এবং ট্রাভেল সাইটে এই হার ৩,২০০ শতাংশ! এই বিশাল প্রবৃদ্ধি ইঙ্গিত দেয়—ওয়েব ট্রাফিকের উৎস এখন দ্রুতগতিতে পরিবর্তিত হচ্ছে।
এই পরিবর্তনের ধারায় টিকে থাকতে ও ব্র্যান্ডগুলোর কনটেন্টকে জেনারেটিভ এআই-ভিত্তিক ইন্টারফেসে এগিয়ে রাখতে নতুন টুল নিয়ে এসেছে অ্যাডোবি। তাদের নতুন উদ্ভাবন ‘LLM Optimizer’ এমন একটি টুল যা চ্যাটবট বা এআই সার্চ ইঞ্জিনে ব্র্যান্ডের কনটেন্ট কীভাবে উপস্থাপিত হচ্ছে, তা পর্যবেক্ষণ করে। সেইসঙ্গে দেয় কার্যকর কনটেন্ট অপ্টিমাইজেশনের দিকনির্দেশনা।
এই টুলের মাধ্যমে রিয়েল-টাইম মনিটরিং ও পারফরম্যান্স বেঞ্চমার্কিং করা সম্ভব। ব্র্যান্ডের উপস্থিতি চ্যাটবট ও ব্রাউজারে কেমন, তা নিয়মিত ট্র্যাক করে এবং প্রতিযোগীদের সঙ্গে তুলনা করে সেরা কিওয়ার্ড চিহ্নিত করতে সাহায্য করে।
‘LLM Optimizer’ বুঝতে পারে—কোন বিষয়গুলো জেনারেটিভ এআই বেশি গুরুত্ব দেয়। যেমন: তথ্যের নির্ভুলতা, বিশ্লেষণধর্মী উপস্থাপন এবং নির্ভরযোগ্য উৎস। এসব বিশ্লেষণের ভিত্তিতে এটি ওয়েবসাইট বা কনটেন্টে কী কী পরিবর্তন দরকার, তা সুপারিশ করে। আর বড় সুবিধা হলো—সেই পরিবর্তনগুলো এক ক্লিকেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব, ডেভেলপার বা কোডিংয়ের ঝামেলা ছাড়াই। এতে করে সময় ও খরচ—দুটোই সাশ্রয় হয়।
বর্তমানে অনেক ব্রাউজারই ব্যবহারকারীর তথ্য ট্র্যাকিং বন্ধ রেখেছে। ফলে ব্র্যান্ডগুলো এখন কনটেন্টকে এমনভাবে অপ্টিমাইজ করতে বাধ্য হচ্ছে, যাতে তা চ্যাটবটের ভেতরে দৃশ্যমান থাকে। তবে এ ক্ষেত্রে তথ্য সংগ্রহ, উৎসের স্বচ্ছতা ও নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠতে পারে।
অ্যাডোবি জানিয়েছে, ‘LLM Optimizer’ এন্টারপ্রাইজ-গ্রেড ফ্রেমওয়ার্ক মেনে তৈরি এবং এটি এজেন্সি ও থার্ড-পার্টি সিস্টেমের সঙ্গে সংযুক্ত করার সুযোগও রাখে।
চ্যাটবট ও জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে ওয়েবসাইটে ট্রাফিক আনার কৌশলে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। এখন আর শুধু এসইও যথেষ্ট নয়—এআই উপযোগী কনটেন্টই হতে যাচ্ছে ভবিষ্যতের মূল চাবিকাঠি। তাই ব্র্যান্ডগুলোকে নতুন কৌশল, নতুন টুল এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে হবে, নয়তো পিছিয়ে পড়তে হবে প্রতিযোগিতার দৌড়ে।
মন্তব্য
এই নিবন্ধটি জন্য কোন মন্তব্য নেই.