২০২৫ সালের ২০ মে থেকে বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে স্টারলিংক ইন্টারনেট সেবা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়। স্পেসএক্সের এই স্যাটেলাইট-নির্ভর দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা নিয়ে দেশের নানা প্রান্তে প্রযুক্তিপ্রেমী ও পেশাদারদের মধ্যে তৈরি হয়েছে ব্যাপক আগ্রহ। কেউ কেউ অর্ডার করার কয়েক দিনের মধ্যেই সংযোগ পেয়ে খুশি হলেও, অনেকে কাস্টমস জটিলতায় পড়ায় বিলম্বে সংযোগ পাচ্ছেন।
বর্তমান ব্রডব্যান্ড সেবায় গতি ও স্থিতিশীলতার ঘাটতি থাকায় অনেকেই স্টারলিংককে একটি কার্যকর বিকল্প হিসেবে দেখছেন। বিশেষ করে ফ্রিল্যান্সার, কনটেন্ট ক্রিয়েটর এবং রিমোট ওয়ার্কারদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সেবা হয়ে উঠছে।
কেরানীগঞ্জের ঘাটারচরে বসবাসকারী এবং মালয়েশিয়ার একটি পেমেন্ট গেটওয়েতে কর্মরত টেক লিড সোহাগ হাসান জানান, ‘আমার এলাকায় ভালো ব্রডব্যান্ড নেই। আমি ২০ মে স্টারলিংক অর্ডার করি এবং ১০ দিনের মধ্যে যন্ত্রপাতি হাতে পাই। রিসিভার ছাদে বসিয়ে ব্যবহার শুরু করি ৩০ মে থেকে। গড় গতি পাই ২৫০-৩০০ Mbps। স্টারলিংক অ্যাপে কনফিগারেশন সহজ ছিল, তবে অ্যানটেনা বসাতে খোলা জায়গা দরকার হয়।’
সোহাগ জানান, তিনি ২০২৩ সালের আগস্টে প্রি-বুক করেন এবং ২০২৫ সালের ২০ মে চূড়ান্ত অর্ডার কনফার্ম করেন। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস থেকে যাত্রা শুরু করে DHL-এর মাধ্যমে যন্ত্রপাতি তার হাতে পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় ১০ দিন। কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সে কিছু সময় লাগলেও ডেলিভারি প্রক্রিয়া ছিল স্বচ্ছ এবং ট্র্যাকযোগ্য।
ইনস্টলেশনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি নিজের হাতে ডিশ সেটআপ করি, ইউটিউব ও স্টারলিংকের গাইড ব্যবহার করে। সংযোগ চালু হতেই প্রথম মাসের বিল কার্ড থেকে কেটে নেয়। আমি রেসিডেনশিয়াল প্যাকেজ ব্যবহার করছি, যার মাসিক খরচ ৬ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত স্পিড ও সেবায় আমি সন্তুষ্ট।’
প্রযুক্তিবিদ মঈনুল কবীর জানান, একটি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে বান্দরবান ও কক্সবাজারে স্টারলিংক ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা রোমিং প্যাকেজে স্টারলিংক ব্যবহার করছি এবং প্রাথমিকভাবে ৩০০–৩৫০ Mbps গতি পেয়েছি। এতে আমরা দূরবর্তী শিক্ষার্থীদের জন্য মোবাইল শ্রেণিকক্ষ পরিচালনা করতে পারব।’
তবে অনেক ব্যবহারকারী জানিয়েছেন, কাস্টমস জটিলতার কারণে ডিভাইস হাতে পেতে বিলম্ব হচ্ছে। ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে অনেকে জানান, অর্ডার করা সত্ত্বেও এখনো পর্যন্ত তাঁরা সংযোগ পাননি। কেউ কেউ জানান, যন্ত্রপাতি দেশে পৌঁছালেও তা বিমানবন্দরে আটকে ছিল।
নারায়ণগঞ্জের ফ্রিল্যান্সার হামিম অপূর্ব বলেন, ‘২৫ মে যন্ত্রপাতি বাংলাদেশে পৌঁছায়, কিন্তু এখনো তা হাতে পাইনি। কাস্টমস জটিলতার কারণে দেরি হচ্ছে।’
এক প্রযুক্তি উদ্যোক্তা জানান, দুই বছর আগে প্রি-বুক করার পরও এখনো সংযোগ পাননি। তাঁর মতে, আমদানির প্রক্রিয়ায় সমন্বয়হীনতার কারণে এমনটা হচ্ছে।
স্টারলিংক নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘প্রথম দিকে যেহেতু গ্রাহকেরা এলসি ছাড়া অনলাইনে অর্ডার করছেন, তাই কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে বর্তমানে এনওসি নেওয়ার মাধ্যমে এসব সমস্যার সমাধান করা হচ্ছে। শিগগিরই নিয়মিত প্রক্রিয়ায় কিট আমদানি শুরু হলে এসব জটিলতা কেটে যাবে।’
তিনি আরও জানান, ঈদের আগে প্রায় ৮০০ স্টারলিংক কিট দেশের বিভিন্ন পোর্টে আটকে ছিল। পরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে তা ছাড়া হয়েছে। এখন স্টারলিংকের ৯০ দিনের কমার্শিয়াল টেস্ট রান চলছে এবং ধীরে ধীরে প্রক্রিয়াটি স্বাভাবিক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে স্টারলিংক ইন্টারনেট সেবার সূচনাটি যেমন আশাব্যঞ্জক, তেমনি কিছু চ্যালেঞ্জেরও মুখোমুখি। দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবায় এটি দেশের প্রযুক্তিনির্ভর জনগোষ্ঠীর জন্য একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে পারে। তবে পুরোপুরি কার্যকর হতে হলে কাস্টমস এবং আমদানি প্রক্রিয়ার সমন্বয় জরুরি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এসব সমস্যা কাটিয়ে উঠে স্টারলিংক সেবা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে বলে আশা করা যায়।
মন্তব্য
এই নিবন্ধটি জন্য কোন মন্তব্য নেই.