তথ্যপ্রযুক্তি দুনিয়ায় এক নতুন বিপ্লবের সূত্রপাত করেছে চীনা এআই স্টার্টআপ ডীপসিক। মাত্র এক বছরের মধ্যে, এই প্রতিষ্ঠানটি এমন এক এআই মডেল তৈরি করেছে, যা বিশ্বের বৃহত্তম প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রযুক্তি বিনিয়োগকারী মার্ক অ্যান্ড্রিসেন একে "এআই-এর স্পুটনিক মুহূর্ত" হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
ডীপসিকের তৈরি R1 মডেল কম খরচে OpenAI-এর GPT-4, Meta-এর Llama এবং Google-এর Gemini-এর মতো বিখ্যাত মডেলগুলোর কাছাকাছি ক্ষমতা প্রদর্শন করেছে। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, তাদের বেস মডেল তৈরিতে খরচ হয়েছে মাত্র ৫.৬ মিলিয়ন ডলার—এটি যেখানে তুলনা করলে মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো একে চালানোর জন্য কয়েকশো মিলিয়ন বা বিলিয়ন ডলার খরচ করে। আর সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চিপ রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও, ডীপসিক কম ক্ষমতার চিপ ব্যবহার করে এই মডেল তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।
২০২৩ সালের শেষের দিকে প্রতিষ্ঠিত ডীপসিক, চীনা হেজ ফান্ড ম্যানেজার লিয়াং ওয়েনফেং দ্বারা গঠিত। তাকে "চীনের স্যাম অল্টম্যান" বলা হয়, কারণ তার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হাই-ফ্লাইয়ার হেজ ফান্ড এআই গবেষণার ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই বছরের শেষে, ডীপসিক তাদের R1 মডেল উন্মোচন করে, যা খরচের দিক থেকে চমকপ্রদ এবং কার্যকারিতায় এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে।
ডীপসিক এর আগে V3 মডেল প্রকাশ করলেও, সেটি চীনা সরকারের সংবেদনশীল বিষয়বস্তু সীমাবদ্ধ করার কারণে বিতর্কিত হয়ে উঠেছিল। তবে R1 মডেলটি তার সাশ্রয়ী মূল্য ও উন্নত কার্যকারিতার জন্য অনেক প্রশংসিত হয়েছে। এছাড়া, এটি একটি ওপেন-সোর্স মডেল, যা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে এটি আরও উন্নত করার সুযোগ দিয়েছে।
এআই মডেল তৈরি করা প্রচুর ব্যয়বহুল এবং শক্তিশালী প্রযুক্তি—বিশ্বের শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো বছরের পর বছর কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ করছে। উদাহরণস্বরূপ, মেটা এ বছর এআই গবেষণায় ৬৫ বিলিয়ন ডলার খরচ করবে, এবং OpenAI-এর সিইও স্যাম অল্টম্যান জানিয়েছেন যে, উচ্চ চাহিদাসম্পন্ন চিপ এবং ডেটা সেন্টারের জন্য এই শিল্পে ট্রিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রয়োজন।
তবে, ডীপসিকের নতুন উদ্ভাবন এআই শিল্পের বিনিয়োগ পরিকাঠামোতে এক নাটকীয় পরিবর্তন আনতে পারে। মার্ক অ্যান্ড্রিসেন এটিকে "সবচেয়ে বিস্ময়কর এবং চিত্তাকর্ষক আবিষ্কারগুলির মধ্যে একটি" বলে আখ্যা দিয়েছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে এআই চিপ রপ্তানি সীমিত করে নিজেদের প্রযুক্তিগত আধিপত্য বজায় রাখতে চেয়েছে। কিন্তু ডীপসিক এই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে দেখিয়েছে যে, কম খরচে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন এআই মডেল তৈরি করা সম্ভব।
এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি শিল্পের জন্য একটি বড় সংকেত হতে পারে। চিপ রপ্তানি সীমিত করলেও, ডীপসিক প্রমাণ করেছে যে, অন্য পথেও শক্তিশালী এআই প্রযুক্তি নির্মাণ করা সম্ভব।
এআই শিল্পে ডীপসিকের উত্থান একটি নতুন যুগের সূচনা হতে পারে, তবে এটি এখনও বড় চাহিদাসম্পন্ন এবং জটিল এআই সমস্যাগুলো সমাধান করতে পুরোপুরি সক্ষম হয়নি। শক্তিশালী প্রতিযোগিতার মধ্যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার প্রযুক্তি উদ্ভাবন বজায় রাখতে পারবে কি না, সেটি এখনও সময়ের ব্যাপার।
তবে, ডীপসিকের সাফল্য আমেরিকার প্রযুক্তি নেতৃত্বের জন্য একটি বড় সতর্কবাণী হতে পারে। বিশ্ববাজারে তার ভূমিকা আগামী বছরগুলিতে আরো শক্তিশালী হয়ে উঠবে।
মন্তব্য
এই নিবন্ধটি জন্য কোন মন্তব্য নেই.