আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ইন্টারনেটের গুরুত্ব অপরিসীম। বর্তমানে, বিভিন্ন কাজের জন্য মোবাইল ডেটা ব্যবহার অনেকটাই বেড়ে গেছে। তবে, অধিক ডেটা ব্যবহারে খরচও বেশ বৃদ্ধি পায়। বেশ কিছু সহজ কৌশল অবলম্বন করলে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ডেটার খরচ সাশ্রয় করা সম্ভব। আজকে আমরা এমন কিছু কৌশল নিয়ে আলোচনা করব যা আমাদের ডেটা খরচ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করবে।
মোবাইল ডেটা খরচ কমানোর সবচেয়ে সহজ উপায় হলো অপ্রয়োজন হলে ডেটা বন্ধ রাখা। অনেক সময় আমরা ফোনে বিভিন্ন কাজ করি, যেগুলোর জন্য ইন্টারনেট সংযোগের প্রয়োজন হয় না। কাজ শেষ হলে বা যখন ইন্টারনেট প্রয়োজন হয় না, তখন ডেটা বন্ধ রাখলে অপ্রয়োজনীয় ডেটা খরচ কমে যায়। এমনকি ব্যাটারির স্থায়ীত্বও কিছুটা বৃদ্ধি পায়।
অনেক সময় ফোনের বিভিন্ন অ্যাপ স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপডেট হয়, যা মোবাইল ডেটা প্রচুর পরিমাণে খরচ করে। যখন ওয়াই-ফাই সংযোগ নেই, তখন অটো-আপডেট মোড বন্ধ রাখুন। অ্যান্ড্রয়েড ফোনের জন্য Play Store এ গিয়ে “Auto-update apps” অপশনটিকে “Over Wi-Fi only” সিলেক্ট করুন। এটি মোবাইল ডেটা সাশ্রয়ে সহায়ক হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য প্রয়োজনীয় ডেটা ধরে রাখতে সাহায্য করবে।
অ্যাপ আপডেট করার সময় কেবলমাত্র ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভর রাখুন। এতে করে মোবাইল ডেটা ব্যবহারের প্রয়োজন কমে আসবে এবং অপ্রয়োজনীয় ডেটা খরচও রোধ করা সম্ভব হবে। অ্যাপের সেটিংসে গিয়ে “Update apps only over Wi-Fi” অপশনটি চালু রাখুন।
ফোনের সেটিংসে গিয়ে কোন অ্যাপ কতটুকু ডেটা খরচ করছে, তা মনিটর করুন। সাধারণত বেশ কিছু অ্যাপ যেমন সোশ্যাল মিডিয়া বা স্ট্রিমিং অ্যাপ বেশি ডেটা খরচ করে। এমন অ্যাপের ডেটা ব্যবহার মনিটর করে, যখন প্রয়োজন হয় তখনই ব্যবহার করুন বা কম প্রয়োজনীয় অ্যাপগুলোর ব্যবহার কমিয়ে দিন। এটি অপ্রয়োজনীয় ডেটা খরচ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হবে।
ফোনে বেশ কিছু অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ ইনস্টল থাকে, যা ব্যাকগ্রাউন্ডে থেকে ডেটা খরচ করে। যেমন, কখনো কখনো অজান্তেই কিছু অ্যাপ ব্যাকগ্রাউন্ডে চালু থেকে ডেটা ব্যবহার করতে থাকে। এসব অ্যাপ সরিয়ে ফেললে ডেটা খরচ কমে আসবে। এর পাশাপাশি ফোনের গতি ও ব্যাটারির স্থায়ীত্বও বৃদ্ধি পাবে।
ভিডিও স্ট্রিমিং যেমন ইউটিউব বা ফেসবুকে ভিডিও দেখার সময় খেয়াল রাখুন যে ভিডিওর কোয়ালিটি সেটিংস “Medium” বা “Low” রাখা হয়েছে। উচ্চমানের (HD) ভিডিও দেখলে অনেক বেশি ডেটা খরচ হয়, তাই মাঝারি বা কম মানে স্ট্রিমিং করে ডেটা সাশ্রয় করা সম্ভব। যেকোনো ভিডিও প্ল্যাটফর্মে এই সেটিংস পরিবর্তন করা যায় এবং এটি ডেটা খরচ কমাতে অনেকটাই কার্যকর।
মোবাইল ফোনের ডেটা সেভার মোডটি চালু রাখুন। অ্যান্ড্রয়েড ফোনের সেটিংসে গিয়ে “Data Saver” মোড চালু করতে পারেন। এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্যাকগ্রাউন্ড ডেটা খরচ নিয়ন্ত্রণ করে এবং যেসব অ্যাপ ব্যাকগ্রাউন্ডে চলতে থাকে সেগুলোর ডেটা খরচ কমিয়ে দেয়। ফলে ফোনে থাকা প্রয়োজনীয় ডেটা দীর্ঘস্থায়ী হয়।
অনেক সময় কিছু অ্যাপ ব্যাকগ্রাউন্ডে থেকে ডেটা খরচ করতে থাকে, যেমন গুগল ম্যাপ বা অন্যান্য জিপিএস-সংশ্লিষ্ট অ্যাপ। এগুলো বন্ধ রাখলে ডেটা খরচ অনেকটাই কমে যায়। মোবাইলের সেটিংসে গিয়ে “Background Data Usage” অপশন থেকে এই অ্যাপগুলোর ডেটা ব্যবহার বন্ধ করে রাখুন, যাতে প্রয়োজন না হলে এরা ব্যাকগ্রাউন্ডে ডেটা ব্যবহার করতে না পারে।
নানান অ্যাপ, বিশেষ করে গেমিং অ্যাপের নোটিফিকেশন চালু থাকলে নিয়মিতভাবে ডেটা খরচ হয়। অ্যাপের নোটিফিকেশন বন্ধ রাখলে এ থেকে রেহাই পাওয়া যায়। ফোনের সেটিংসে গিয়ে প্রয়োজনীয় অ্যাপগুলোর নোটিফিকেশন বন্ধ রাখতে পারেন, যা ডেটা খরচ কমাবে এবং ফোনের ব্যাটারিরও স্থায়ীত্ব বাড়াবে।
কিছু সাইট বা অ্যাপ যেমন শপিং বা ই-কমার্স সাইট সাধারণত বেশি ডেটা খরচ করে। এই ধরনের সাইটগুলো ওয়াই-ফাই সংযোগে ব্যবহার করতে চেষ্টা করুন, যাতে মোবাইল ডেটা সাশ্রয় করা সম্ভব হয়।
উপরের এই কৌশলগুলো অনুসরণ করলে সহজেই মোবাইল ডেটা খরচ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। এতে করে অপ্রয়োজনীয় খরচ কমবে এবং ডেটা ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়া যাবে। নিয়মিতভাবে এসব পদ্ধতি অবলম্বন করলে ডেটা ব্যবহারে সাশ্রয়ী থাকা যাবে, যা দীর্ঘমেয়াদে খরচ নিয়ন্ত্রণে রাখবে।
মন্তব্য
এই নিবন্ধটি জন্য কোন মন্তব্য নেই.