চীন তৈরি করেছে নতুন এক প্রযুক্তি– যা লেজার ব্যবহার করে উড়ন্ত মশা শনাক্ত করে সঙ্গে সঙ্গে মেরে ফেলতে পারে। ডিভাইসটির নাম ‘ফোটন ম্যাট্রিক্স’, যা বর্তমানে পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে এবং ক্রাউডফান্ডিং প্ল্যাটফর্ম ইন্ডিগোগোতে (Indiegogo) তহবিল সংগ্রহ চলছে।
ফোটন ম্যাট্রিক্স মূলত লেজারভিত্তিক একধরনের অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট সিস্টেমের অনুকরণে তৈরি। এতে ব্যবহৃত হয়েছে LiDAR (Light Detection and Ranging) প্রযুক্তি, যা লেজার আলোর স্পন্দন ছুড়ে মশার অবস্থান, দিক ও গড়ন শনাক্ত করে। শনাক্ত হওয়ার পরপরই একটি গ্যালভোনোমিটার লেজার মশাটিকে নিধন করে। ডিভাইসটি মাত্র তিন মিলিসেকেন্ডে একটি মশা শনাক্ত ও ধ্বংস করতে সক্ষম বলে দাবি করা হয়েছে।
নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের তথ্যমতে, ডিভাইসটি সম্পূর্ণ অন্ধকারেও কাজ করে এবং প্রতি সেকেন্ডে সর্বোচ্চ ৩০টি মশা নিধন করতে পারে। তবে এটি প্রতি সেকেন্ডে ১ মিটার গতির বেশি গতিতে উড়তে থাকা পোকা শনাক্ত করতে পারে না, ফলে মাছি বা অন্য দ্রুতগতির পোকামাকড়ের ক্ষেত্রে এটি কার্যকর নয়।
দুটি সংস্করণে বাজারে আসছে ডিভাইসটি—বেসিক এবং প্রো। বেসিক মডেল ৯০ ডিগ্রি কভারেজে ৩ মিটার পর্যন্ত কার্যক্ষম, আর প্রো সংস্করণে এটি বেড়ে ৬ মিটার পর্যন্ত হয়। বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ব্যবহার করা যাবে ওয়াল সকেট কিংবা রিচার্জেবল পাওয়ার ব্যাংক, যা একবার চার্জে ৮ থেকে ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত চালানো সম্ভব (মডেলভেদে ভিন্ন হতে পারে)।
মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে এতে মিলিমিটার-ওয়েভ রাডার যুক্ত করা হয়েছে, যা মানব বা পোষা প্রাণীর উপস্থিতি শনাক্ত করলে লেজার বন্ধ করে দেয়।
ফোটন ম্যাট্রিক্সের পেছনে রয়েছে ২০০৭ সালের একটি ধারণা, যা প্রথম সামনে আনেন মার্কিন বিজ্ঞানী ও ‘স্টার ওয়ারস’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা প্রকল্পের অন্যতম স্থপতি লোয়েল উড। পরে মোবাইল ফোন ও লেজার প্রিন্টারের যন্ত্রাংশ দিয়ে বিভিন্ন প্রোটোটাইপ তৈরি করা হয় এবং ২০১৭ সালে একটি ডিভাইস প্রথমবারের মতো টেড সম্মেলনে প্রদর্শিত হয়। তবে সেসময় সেটি মানবদৃষ্টির জন্য নিরাপদ ছিল না।
বর্তমানে নির্মাতারা দাবি করছেন, ফোটন ম্যাট্রিক্সে বাধ্যতামূলক নিরাপত্তা সার্টিফিকেশন যুক্ত করা হয়েছে। তবে তারা সেটি চীনা না আন্তর্জাতিক মানদণ্ড, তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেনি।
এটি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের প্রথম ইন্ডিগোগো প্রকল্প হওয়ায় প্রযুক্তিবিদ ও বিশ্লেষকরা গ্রাহকদের সতর্কভাবে এগোনোর পরামর্শ দিচ্ছেন।
তহবিল সংগ্রহ সফল হলে, ডিভাইসটির প্রি-অর্ডার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে—
খুচরা বাজারে এই মূল্য বেড়ে যথাক্রমে ৬৯৭ ও ৮৯৭ ডলার হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রকল্পটি সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে এটি মশা নিয়ন্ত্রণে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হতে পারে। তবে বাণিজ্যিকভাবে উন্মুক্ত হওয়ার আগে কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা নিয়ে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে।
মন্তব্য
এই নিবন্ধটি জন্য কোন মন্তব্য নেই.