২০ এপ্রিল ২০২৫
৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চিকিৎসক ও শিক্ষক–সংকট মেটাতে এআই, হুমকিতে আরও কিছু পেশা: বিল গেটস

calendar_month ১৯ এপ্রিল ২০২৫ ১৮:২০:১০ person অনলাইন ডেস্ক
চিকিৎসক ও শিক্ষক–সংকট মেটাতে এআই, হুমকিতে আরও কিছু পেশা: বিল গেটস

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চিকিৎসা ও শিক্ষা খাতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে বলে মনে করেন মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস। তাঁর মতে, বিশ্বজুড়ে চিকিৎসক ও শিক্ষকের ঘাটতি পূরণে এআই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে একই সঙ্গে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, শ্রমনির্ভর বেশ কিছু পেশা এআই ও রোবট প্রযুক্তির কারণে ঝুঁকিতে পড়বে।

সম্প্রতি ‘পিপল বাই ডব্লিউটিএফ’ নামের একটি পডকাস্টে দেওয়া সাক্ষাৎকারে গেটস বলেন, “এআই এসে চিকিৎসাবিষয়ক বুদ্ধিমত্তা জোগাবে, তখন আর চিকিৎসকের ঘাটতি থাকবে না।” তাঁর ভাষ্য, যেসব খাতে দক্ষ জনবল সংকট রয়েছে, সেসব জায়গায় এআই কার্যকর সমাধান হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের আমেরিকান মেডিকেল কলেজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৩৬ সালের মধ্যে কেবল দেশটিতেই চিকিৎসকের ঘাটতি দাঁড়াতে পারে প্রায় ৮৬ হাজারে। চিকিৎসা খাতে একই রকম সংকট রয়েছে ভারত ও আফ্রিকার বহু দেশেও।

এই বাস্তবতায় ‘সুকি’, ‘জেফায়ার এআই’ ও ‘টেনার’-এর মতো এআইভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিপুল বিনিয়োগ পাচ্ছে। এসব স্টার্টআপ এমন সফটওয়্যার তৈরি করছে, যেগুলোর মাধ্যমে রোগনির্ণয়, ক্লিনিক্যাল ডকুমেন্টেশন, বিলিং ও রোগী শনাক্তকরণসহ নানা কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব।

প্রযুক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ম্যাককিনসের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, শুধু স্বাস্থ্য ও ওষুধ খাতে জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তি বছরে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি ডলার উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারে।

শুধু চিকিৎসা নয়, শিক্ষা খাতেও এআইয়ের ব্যবহার বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের K-12 পর্যায়ের ৮৬ শতাংশ পাবলিক স্কুল ২০২৩ সালে শিক্ষক সংকটে ভুগেছে। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ স্কুলে সরাসরি শিক্ষক স্বল্পতা ছিল।

এই সংকটে যুক্তরাজ্যের ডেভিড গেইম কলেজ পরীক্ষামূলকভাবে চ্যাটজিপিটির মতো এআই টুল ব্যবহার শুরু করেছে। শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ও গণিত শেখাতে ব্যবহার করা হচ্ছে এই প্রযুক্তি। যদিও শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত এআই নির্ভরতা এবং অসদুপায় গ্রহণের ঝুঁকির বিষয়েও শঙ্কা রয়েছে, শিক্ষকেরা বলছেন, এটি সময় সাশ্রয় করছে এবং শেখার অভিজ্ঞতাও উন্নত হচ্ছে।

বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ ছাড়াও শারীরিক শ্রমনির্ভর পেশার ক্ষেত্রেও এআই ও রোবট প্রযুক্তির প্রভাব বাড়ছে বলে জানান বিল গেটস। তাঁর মতে, গুদামে পণ্য ওঠানো, মেঝে পরিষ্কার কিংবা নির্মাণসাইটে কাজের মতো পেশাও ভবিষ্যতে রোবটের মাধ্যমে পরিচালিত হতে পারে।

এনভিডিয়ার মতো প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে এমন মানবাকৃতির রোবট তৈরির কাজ করছে, যেগুলো গুদাম ও নির্মাণশিল্পে ব্যবহারযোগ্য হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এতে শ্রমঘণ্টা ও উৎপাদন খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে।

বিল গেটস মনে করেন, ভবিষ্যতে এমন সময় আসতে পারে, যখন মানুষ সপ্তাহে মাত্র ১৫ ঘণ্টা কাজ করলেই চলবে। তিনি অর্থনীতিবিদ জন মেনার্ড কেইন্সের ১৯৩০ সালের একটি ভবিষ্যদ্বাণীর কথা তুলে ধরেন, যেখানে প্রযুক্তির অগ্রগতির কারণে কর্মঘণ্টা কমে আসবে বলা হয়েছিল।

তবে বাস্তবতা হলো, এখনো বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টার বেশি সময় কাজ করছেন। গেটস বলেন, “এআই আমাদের কাজ, সময় ও জীবনের ধরন নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। সামনে হয়তো আমাদের কর্মসংস্কৃতি ও অবসরের সংজ্ঞাও বদলে যাবে।”

এই নিবন্ধটি জন্য কোন মন্তব্য নেই.

আপনার মন্তব্য লিখুন